রাদারফোর্ডের মডেলের সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করার জন্য রাদারফোর্ডের পরীক্ষালব্ধ ফলাফলের সাথে প্ল্যাঙ্কের কোয়ান্টাম তত্ত্ব সমন্বয় করে ১৯১৩ সালে ডেনমার্কের পদার্থবিজ্ঞানী নীলস্ বোর পরমাণুর গঠন সম্পর্কে একটা নতুন মডেল উপস্থাপন করেন।
কোয়ান্টাম তত্ত্বের ওপর ভিত্তি করে বোরের মডেলের উল্লেখযোগ্য প্রস্তাব বা স্বীকার্য হলো :
অর্থাৎ,
সুতরাং আবর্তনশীল ইলেকট্রনের কক্ষপথ ছিন্নায়িত ও অনুমোদিত।
এ কক্ষগুলো শক্তি স্তর নামে পরিচিত। নিউক্লিয়াস থেকে ক্রমাগত দূরবর্তী শক্তিরসমূহকে ১ম, ২য়, আ ইত্যাদি শক্তি স্তর বলা হয়। প্রত্যেক শক্তিস্তরে ইলেকট্রনের শক্তি নির্দিষ্ট।
কোনো ইলেকট্রন যদি উচ্চশক্তি স্তর Eu থেকে একটি নিম্নশক্তি স্তর El -এ গমন করে তাহলে নিঃসৃত ফোটনের
শক্তি হবে, hf = Eu - El….(9.2)
এখানে h হলো প্ল্যাঙ্কের ধ্রুবক এবং f হলো ফোটনের কম্পাঙ্ক।
রাদারফোর্ডের মডেলের সীমাবদ্ধতা অভিক্রমণ বোরের মডেলের সাহায্যে রাদারফোর্ড মডেলের সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করা সম্ভব হয়।
পরমাণুর স্থায়িত্ব এক অতি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। রাদারফোর্ডের মডেল পরমাণুর স্থায়িত্ব ব্যাখ্যা করতে ব্যর্থ হয়। কোয়ান্টাম মডেল উপস্থাপন করে বোর এ সীমবদ্ধতা অতিক্রম করতে সক্ষম হন। এই মডেলের সাহায্যে হাইড্রোজেন পরমাণুর বর্ণালি রেখার উৎপত্তির ব্যাখ্যা দেওয়া সম্ভব হয় এবং কক্ষপথের ব্যাসার্ধ ও কক্ষপথে ইলেকট্রনের শক্তি পরিমাপ করাও এই মডেলের সাহায্যে সম্ভব হয়।
পরমাণুর ইলেকট্রনগুলোর শক্তির কতগুলো সুনির্দিষ্ট মান থাকতে পারে, এই মানগুলোকে পরমাণুর শক্তিস্তর বলা হয়। কোনো নির্দিষ্ট মৌলের সকল পরমাণুর শক্তিস্তরের একই রকম সেট থাকে। এটিই ঐ মৌলের বৈশিষ্ট্য। এর অর্থ হলো, অন্যান্য মৌলের জন্য শক্তিস্তরের এই সেট পৃথক। কোনো পরমাণুর বিভিন্ন শক্তিস্তরের শক্তি তরঙ্গ বলবিদ্যা ব্যবহার করে বের করা যায়। হাইড্রোজেন পরমাণুর বেলায় বোর মডেল ব্যবহার করে এই শক্তি স্তরের শক্তি বের করা যায়।
পরমাণুর শক্তি স্তরকে চিত্রে অনুভূমিক রেখায় অনুক্রম দ্বারা নির্দেশ করা হয়। চিত্র ১৯-৫-এ হাইড্রোজেন পরমাণুর শক্তিস্তরের চিত্র দেখানো হয়েছে। হাইড্রোজেনের শুধু একটি ইলেকট্রন থাকে যা সাধারণত সর্বনিম্ন শক্তিস্তর দখল করে থাকে। এই স্তরের শক্তির মান হলো - 13.6 eV। ইলেট্রনটি যখন এই শক্তি স্তরে থাকে তখন পরমাণু ভূমি অবস্থায় রয়েছে বলা হয়। কোনো পরমাণু যদি কোনো না কোনোভাবে শক্তি শোষণ করে অন্য কোনো পরমাণুর সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে অথবা তড়িতচৌম্বক বিকিরণ শোষণ করে যদি উত্তপ্ত হয় তাহলে ইলেকট্রনটি একটি উচ্চ শক্তিস্তরে উঠে যেতে পারে। এতে পরমাণুটি অস্থিতিশীল হয়। এ অবস্থাকে বলা হয় উত্তেজিত অবস্থা, কিছুক্ষণ পরে অক্রম সময় ব্যবধানে ইলেকট্রন শক্তির নিম্নতম স্তরে নেমে আসে অর্থাৎ পরমাণুটি ভূমি অবস্থায় ফিরে আসে । ইলেট্রন যে শক্তি শোষণ করছিল তা তড়িতচৌম্বক বিকিরণরূপে নির্গত হয়ে যায় ।
প্রতিটি শক্তিস্তরকে কোয়ান্টাম সংখ্যা দ্বারা বৈশিষ্ট্যায়িত করা হয়। সর্বনিম্ন শক্তিস্তরের জন্য n = 1, পরবর্তী স্তরের জন্য n = 2 ইত্যাদি, n = (অসীম) স্তরের জন্য শক্তির মান শূন্য। কোনো ইলেকট্রন উত্তেজিত হয়ে এই স্তরে উঠলে এটি আর পরমাণুতে আবদ্ধ থাকে না, পরমাণু থেকে মুক্ত হয়ে যায়। কোনো পরমাণু একটি ইলেকট্রন হারালে তা আয়নিত হয়ে যায়, ভূমি অবস্থা থেকে কোনো হাইড্রোজেন পরমাণুকে আয়নিত করতে 13.6ev শক্তির প্রয়োজন হয়।
আরও দেখুন...